Dhaka ১২:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
বিড়ালের রহস্যজনক আচরণ: কেন মৃ-ত প্রাণী বাড়িতে নিয়ে আসে? ভারতে মন্দিরের সেবায়েতকে পিটিয়ে হত্যা: অভিযুক্ত আটক খেজুরে কী আছে, যা বিষ আর জাদুকেও দূরে রাখে? মৌলভীবাজারে রেললাইনে হাঁটতে গিয়ে প্রাণ হারালেন এক যুবক প্রতিদিন মাথাব্যথা কেন হচ্ছে? লুকিয়ে আছে কোন বিপদ? বাইতুল মুকাদ্দাস: ইসলামের প্রথম কিবলা ও রহস্যময় ঐতিহ্য গাইবান্ধায় মোবাইল ব্যাংকিং হ্যাকিং চক্রের দুই সদস্য আটক, উদ্ধার ১৬৪৯ সিম ও নগদ অর্থ নরসিংদীতে গণ অধিকার পরিষদের ঈদ পুনর্মিলনী: ঐক্যের ডাক নেতাদের ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ঢল, প্রাণ ফিরে পেল মৌলভীবাজারের পর্যটন স্পটগুলো একজন দাস থেকে জান্নাতের ঘোষক:হজরত বেলাল (রাঃ)-এর অবিস্মরণীয় জীবন
নোটিশঃ
প্রিয়" পাঠকগণ", "শুভাকাঙ্ক্ষী" ও প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে জানানো যাচ্ছে:- কিছুদিন যাবত কিছু প্রতারক চক্র দৈনিক ক্রাইম তালাশ এর নাম ব্যবহার করে প্রতিনিধি নিয়োগ ও বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। তার সাথে একটি সক্রিয় চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপ বিভিন্ন ভাবে "দৈনিক ক্রাইম তালাশ"কে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মনে রাখবেন "দৈনিক ক্রাইম তালাশ" এর অফিসিয়াল পেজ বা নিম্নের দুটি নাম্বার ব্যাতিত কোন রকম লেনদেনে জড়াবেন না। মোবাইল: 01867329107 হটলাইন: 01935355252

আজ পহেলা মে! শ্রমিকদের ‘দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ’-এর দাবী আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পাই এই দিনে

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:৩৭:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫
  • ৮৮ Time View

কাশপ্রিয়া আলম সিফা,ঢাকা: ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর সময়কার কথা। শ্রমিকরা তখন দিনে গড়ে ১২ ঘণ্টা কাজ করলেও তার বিনিময়ে সামান্য মজুরিও পেতেন না। শিল্প মালিকরাই অধিক লাভ ভোগ করতো। উল্টোদিকে শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করতো। উপরন্তু ছিল মালিকপক্ষের অনবরত অকথ্য নির্যাতন। কখনো আবার তা পৌঁছাতো ক্রীতদাসতুল্য পর্যায়ে!

১৮৬০ সালে শ্রমিকরা তাঁদের মজুরি না কমিয়ে সারা দিনে আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের জন্য দাবি জানান। এ জন্য তাঁরা একটি সংগঠনও তৈরি করেন পরবর্তীকালে, যার নাম হয় আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার। এই সংগঠন শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি ও অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে অবিরত আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে।

১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একদল শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার জন্য আন্দোলন শুরু করেন, এবং তাদের এ দাবী কার্যকর করার জন্য তারা সময় বেঁধে দেন ১৮৮৬ সালের পহেলা মে পর্যন্ত। বারবার মালিকপক্ষের কাছে দাবি জানানো হলেও একটুও সাড়া মেলে না তাঁদের কাছে। একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এ বিষয়ে এক আলোড়ন তোলা আর্টিকেল। ব্যস, বিদ্রোহ ওঠে চরমে। আর শিকাগো হয়ে ওঠে প্রতিবাদ-বিদ্রোহের মূল মঞ্চ।

পহেলা মে যতই এগিয়ে আসছিল, দুই পক্ষের সংঘর্ষ অবধারিত হয়ে উঠছিল। মালিক-বণিক শ্রেণি ঐ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। পুলিশ আগেই শ্রমিকদের উপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছিল। আবারও চলল তেমনই প্রস্তুতি। শ্রমিকদের ওপর গুলি চালাতে পুলিশকে বিশেষ অস্ত্র কিনে দেন ব্যবসায়ীরা। পহেলা মে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় তিন লাখ শ্রমিক কাজ ফেলে নেমে আসেন রাস্তায়। আন্দোলন চরমে ওঠে।

৪ মে, ১৮৮৬ সাল, ঘড়িতে তখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। চারিদিকে হালকা বৃষ্টির সাথে হিমেল হাওয়া বইছে। এরই মধ্যে শিকাগোর হে-মার্কেট স্কয়ার নামক এক বাণিজ্যিক এলাকায় শ্রমিকগণ মিছিলের উদ্দেশ্যে জড়ো হন। তারা ১৮৭২ সালে কানাডায় অনুষ্ঠিত এক বিশাল শ্রমিক শোভাযাত্রার সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে এটি করেছিলেন।

অগাস্ট স্পীজ নামে এক নেতা জড়ো হওয়া শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলছিলেন। হঠাৎ দূরে দাঁড়ানো পুলিশ দলের কাছে এক বোমার বিস্ফোরণ ঘটে, এতে মেথিয়াস জে. ডিগান নামের একজন পুলিশ তৎক্ষণাৎ এবং আরও ছয়জন পরবর্তীতে নিহত হয়। পুলিশবাহিনী শ্রমিকদের উপর অতর্কিতে হামলা শুরু করে যা রায়ট বা দাঙ্গায় রূপ নেয়। এই রায়টে ১১ জন শ্রমিক শহীদ হন।

পুলিশের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করে অগাস্ট স্পীজ-সহ মোট আটজনকে  প্রহসনমূলকভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাদের মধ্যে ‘অস্কার নীবে’-কে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। অবাক করা ব্যাপার হলো, ফাঁসি দেয়ার আগেই কারারুদ্ধ অবস্থায় ‘লুইস লিং’ নামের একজন আত্মহত্যা করেন। বাকি ছয়জনকে ১৮৮৭ সালের ১১ই নভেম্বর তারিখে উন্মুক্ত স্থানে ফাঁসি দেয়া হয়।

ফাঁসিতে ঝুলার আগ মুহূর্তে অগাস্ট স্পীজ বলেছিলেন, “The day will come when our silence will be more powerful than the voices you are throttling today.”

তখন অ্যাডল্ফ ফিশার বলেছিলেন,  “This is the happiest moment of my life.”

এবং আলবার্ট পারসন্স বলেছিলেন, “Let the voices of people be heard…”  তিনি এই বাক্যটি শেষ করার আগেই ফাঁসিতে মৃত্যু হয় তার।

মজার ব্যাপার হলো এই মিথ্যা বিচারের অপরাধ শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে। ২৬ জুন ১৮৯৩ ইলিনয়ের গভর্নর জন পিটার অল্টগেল্ড -এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, মিথ্যে ছিল ওই বিচার। পুলিশের কমান্ডারকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়।

শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের ‘দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ’-এর দাবী আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়। সেই থেকে পহেলা মে পালিত হয় শ্রমিকদের আত্মদান আর দাবি আদায়ের দিন হিসেবে।

Tag :

One thought on “আজ পহেলা মে! শ্রমিকদের ‘দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ’-এর দাবী আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পাই এই দিনে

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

বিড়ালের রহস্যজনক আচরণ: কেন মৃ-ত প্রাণী বাড়িতে নিয়ে আসে?

আজ পহেলা মে! শ্রমিকদের ‘দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ’-এর দাবী আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পাই এই দিনে

Update Time : ১২:৩৭:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫

কাশপ্রিয়া আলম সিফা,ঢাকা: ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর সময়কার কথা। শ্রমিকরা তখন দিনে গড়ে ১২ ঘণ্টা কাজ করলেও তার বিনিময়ে সামান্য মজুরিও পেতেন না। শিল্প মালিকরাই অধিক লাভ ভোগ করতো। উল্টোদিকে শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করতো। উপরন্তু ছিল মালিকপক্ষের অনবরত অকথ্য নির্যাতন। কখনো আবার তা পৌঁছাতো ক্রীতদাসতুল্য পর্যায়ে!

১৮৬০ সালে শ্রমিকরা তাঁদের মজুরি না কমিয়ে সারা দিনে আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের জন্য দাবি জানান। এ জন্য তাঁরা একটি সংগঠনও তৈরি করেন পরবর্তীকালে, যার নাম হয় আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার। এই সংগঠন শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি ও অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে অবিরত আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে।

১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একদল শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার জন্য আন্দোলন শুরু করেন, এবং তাদের এ দাবী কার্যকর করার জন্য তারা সময় বেঁধে দেন ১৮৮৬ সালের পহেলা মে পর্যন্ত। বারবার মালিকপক্ষের কাছে দাবি জানানো হলেও একটুও সাড়া মেলে না তাঁদের কাছে। একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এ বিষয়ে এক আলোড়ন তোলা আর্টিকেল। ব্যস, বিদ্রোহ ওঠে চরমে। আর শিকাগো হয়ে ওঠে প্রতিবাদ-বিদ্রোহের মূল মঞ্চ।

পহেলা মে যতই এগিয়ে আসছিল, দুই পক্ষের সংঘর্ষ অবধারিত হয়ে উঠছিল। মালিক-বণিক শ্রেণি ঐ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। পুলিশ আগেই শ্রমিকদের উপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছিল। আবারও চলল তেমনই প্রস্তুতি। শ্রমিকদের ওপর গুলি চালাতে পুলিশকে বিশেষ অস্ত্র কিনে দেন ব্যবসায়ীরা। পহেলা মে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় তিন লাখ শ্রমিক কাজ ফেলে নেমে আসেন রাস্তায়। আন্দোলন চরমে ওঠে।

৪ মে, ১৮৮৬ সাল, ঘড়িতে তখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। চারিদিকে হালকা বৃষ্টির সাথে হিমেল হাওয়া বইছে। এরই মধ্যে শিকাগোর হে-মার্কেট স্কয়ার নামক এক বাণিজ্যিক এলাকায় শ্রমিকগণ মিছিলের উদ্দেশ্যে জড়ো হন। তারা ১৮৭২ সালে কানাডায় অনুষ্ঠিত এক বিশাল শ্রমিক শোভাযাত্রার সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে এটি করেছিলেন।

অগাস্ট স্পীজ নামে এক নেতা জড়ো হওয়া শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলছিলেন। হঠাৎ দূরে দাঁড়ানো পুলিশ দলের কাছে এক বোমার বিস্ফোরণ ঘটে, এতে মেথিয়াস জে. ডিগান নামের একজন পুলিশ তৎক্ষণাৎ এবং আরও ছয়জন পরবর্তীতে নিহত হয়। পুলিশবাহিনী শ্রমিকদের উপর অতর্কিতে হামলা শুরু করে যা রায়ট বা দাঙ্গায় রূপ নেয়। এই রায়টে ১১ জন শ্রমিক শহীদ হন।

পুলিশের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করে অগাস্ট স্পীজ-সহ মোট আটজনকে  প্রহসনমূলকভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাদের মধ্যে ‘অস্কার নীবে’-কে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। অবাক করা ব্যাপার হলো, ফাঁসি দেয়ার আগেই কারারুদ্ধ অবস্থায় ‘লুইস লিং’ নামের একজন আত্মহত্যা করেন। বাকি ছয়জনকে ১৮৮৭ সালের ১১ই নভেম্বর তারিখে উন্মুক্ত স্থানে ফাঁসি দেয়া হয়।

ফাঁসিতে ঝুলার আগ মুহূর্তে অগাস্ট স্পীজ বলেছিলেন, “The day will come when our silence will be more powerful than the voices you are throttling today.”

তখন অ্যাডল্ফ ফিশার বলেছিলেন,  “This is the happiest moment of my life.”

এবং আলবার্ট পারসন্স বলেছিলেন, “Let the voices of people be heard…”  তিনি এই বাক্যটি শেষ করার আগেই ফাঁসিতে মৃত্যু হয় তার।

মজার ব্যাপার হলো এই মিথ্যা বিচারের অপরাধ শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে। ২৬ জুন ১৮৯৩ ইলিনয়ের গভর্নর জন পিটার অল্টগেল্ড -এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, মিথ্যে ছিল ওই বিচার। পুলিশের কমান্ডারকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়।

শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের ‘দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ’-এর দাবী আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়। সেই থেকে পহেলা মে পালিত হয় শ্রমিকদের আত্মদান আর দাবি আদায়ের দিন হিসেবে।