খেলাধুলা ডেস্ক:টিম বাস অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের দুই নম্বর গেট দিয়েই ঢোকে। যেখানে আঁকা বীরেন্দর শেবাগের ছবি। সেই সঙ্গে বাদ যায়নি তাঁর যাবতীয় ক্রিকেটীয় কীর্তি ও সাফল্যের রেসিপিও। মাঠে ঢোকার সময় সেসব বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের চোখ এড়িয়ে যাওয়ার কথা নয়।
অর্থহীন ম্যাচও মহাগুরুত্বপূর্ণটেকনিকের দিক থেকে খুব জমাট না হলেও নিজের সময়ে ব্যাট হাতে ক্রিকেট বিশ্ব শাসন করা ব্যাটার এভাবেই সফল হয়ে এসেছেন, ‘আমি সেরা যে জিনিসটি সব সময় করে এসেছি, সেটি হলো নিজের ওপর বিশ্বাস রাখা।’ যা এই মুহূর্তে হারিয়ে বসে আছেন বাংলাদেশের বেশির ভাগ ব্যাটারই। তাঁদের দুর্দশায় নিদারুণ ব্যর্থতার এক আসর পার করতে থাকা বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শেষ হয়েও হচ্ছে না শেষ!
আরো দুটি ম্যাচ বাকি। এর প্রথমটিতে আজ প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা।
দুই দলের সেমিফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা আরো আগেই শেষ হয়ে যাওয়ার পরও অবশ্য এটি অর্থহীন ম্যাচের মোড়ক পরে ফেলেনি। দুই দলের জন্য বরং মহাগুরুত্বপূর্ণই হয়ে উঠেছে। কারণ ওয়ানডে বিশ্বকাপে তবু র্যাংকিংয়ের সেরা আটে না থাকলেও বাছাই পর্বের বাধা পেরিয়ে আসার সুযোগ ছিল। শ্রীলঙ্কাই যেমন এসেছে।
আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগ তিন নম্বরে থেকে শেষ করা বাংলাদেশ অবশ্য সরাসরিই জায়গা করে নিয়েছিল বিশ্বকাপে। তবে ২০২৫ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে হলে এই আসরে সেরা আটের মধ্যে থাকতেই হবে। বাছাই পর্ব বলে কিছু রাখা হয়নি সেই আসরে। তাই আগের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে মাত্র ৫৫ রানে অল আউট হওয়া শ্রীলঙ্কার মতো খাদের কিনারে টানা ছয় মাচ হারা বাংলাদেশও। লঙ্কানদের অবশ্য একটি জয় বেশি।
আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাওয়া একমাত্র জয় নিয়ে সাকিব আল হাসানরাও চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তায়। সে জন্য আজ জিততেই হবে। না জিতলেও হয়তো কাগজে-কলমে কিছুটা সম্ভাবনা থেকে যাবে। কিন্তু সেটিও না থাকার মতোই। তাই আজ জয়ের কোনো বিকল্প নেই। তবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিই শুধু নয়, এই আসরে লাগাতার ব্যর্থতা নিয়ে বইতে থাকা তীব্র সমালোচনার উত্তাপ কিছুটা কমাতেও জয় চাই বাংলাদেশের।
অবশ্য শ্রীলঙ্কার চিত্রও ভিন্ন কিছু নয়। এরই মধ্যে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের (এসএলসি) সচিব মোহন ডি সিলভা পদত্যাগ করেছেন। ‘ব্যক্তিগত কারণে’ বললেও ধারণা করা হচ্ছে ভারত ম্যাচে কুশল মেন্ডিসদের ‘৫৫’ কাণ্ডের প্রভাবেই। সে দেশের ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ও ব্যর্থতার জন্য এসএলসির দুর্নীতিতে ডুবে থাকাকেই দায়ী করছে। বাংলাদেশে অতটা না হলেও ক্রিকেট প্রশাসন ও ক্রিকেটারদের সামর্থ্য প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে। দুই দলের জন্যই তাই একটি জয় হয়ে উঠতে পারে আপাতত সুরক্ষার একটি ঢাল। সেই হিসাবে অন্যদের কাছে এটি যতই অর্থহীন ম্যাচ হোক না কেন, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার কাছে মহাগুরুত্বপূর্ণই।
মুখ রক্ষার জন্য যেমন, তেমনি পিঠ বাঁচানোর জন্যও। বাংলাদেশের হেড কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহেও এই ম্যাচের আগে দুই দলকে দেখলেন সেই এক বিন্দুতেই, ‘সত্যি বলতে দুই দলই প্রায় একই অবস্থায় আছে। চাইছে যতটা সম্ভব ওপরে থাকা যায়। দুই দলই সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে গেছে। আমাদের মনোযোগ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। কারা ওপরে থাকবে, এই ম্যাচের ওপরই নির্ভর করছে অনেকটা।’ যদিও এই শ্রীলঙ্কান কোচ এখনো তাঁর দলের ব্যাটারদের সমস্যা ধরে উঠতে পারেননি। তাঁর কাছে বরং মনে হচ্ছে, সব ঠিকই আছে। কিন্তু কোনো একটি কারণে হচ্ছে না। এই না হওয়ার দায়ও নিজের কাঁধে নিচ্ছেন তিনি। চাকরি হারানোর আলোচনার মধ্যেও বাংলাদেশ দলকে সামনে এগিয়ে দেওয়ার কাজ বিশ্বকাপের পর শুরু করার কথাও বললেন।
এর আগে সান্ত্বনার জয়ে গৌরব কিছুটা পুনরুদ্ধারের নিশ্চিত কোনো ফর্মুলাও নেই তাঁর কাছে। দলকে পথে ফেরানোর উপায় খুঁজে না পেয়ে শেষে নিউজিল্যান্ড ম্যাচের পাকিস্তান থেকেই অনুপ্রেরণা খুঁজতে চাইলেন, ‘আগের ম্যাচে পাকিস্তান যা করেছে, আমাদেরও তেমন কিছুই দরকার। ওদের একজনই দাঁড়িয়ে গিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে দিল। আমাদেরও এমন কিছুই প্রয়োজন। ওরকম একটি ইনিংস বা স্পেলই আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিতে পারে।’
তাই বলে শ্রীলঙ্কাও তো বসে থাকবে না। দলটির অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসকে ৫৫ রানে গুটিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে বিব্রত করার চেষ্টা চললেও তিনি যেন পাল্টা হুংকারই দিয়ে রাখতে চাইলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে প্রচুর ম্যাচ খেলায় আমরা ওদের বিষয়ে জানি। আর ৫৫ রানের কথা বলছেন? এর আগেও আমরা বহুবার এ রকম বাজে পারফরম্যান্সের পর ঘুরে দাঁড়িয়েছি।’ অবশ্য প্রতিপক্ষই শুধু নয়, দুই দলের জন্য দিল্লির বায়ুদূষণও কম চ্যালেঞ্জ নয়। শ্রীলঙ্কা শিবির আইসিসিকে পর্যালোচনা করে দেখার অনুরোধ করেছিল। আয়োজকদের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে দূষণ কমাতে মাঠে কিছু যন্ত্রপাতিও বসানো হয়েছে।
তা না হয় কিছু কমল, কিন্তু বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ঊর্ধ্বমুখী হবে তো? এই ম্যাচের উইকেট অবশ্য লঙ্কানদের একটু বেশিই চেনা। একই উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের বিপক্ষে করেছিল এই আসরের সর্বোচ্চ ৪২৮ রান। কুশল মেন্ডিসরাও রান তাড়ায় তিন শ পার করেন। এমন ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে রান করার জন্য বাংলাদেশের ব্যাটারদের নিজেদের ওপর বিশ্বাস ফেরানোও কম জরুরি নয়। তা ফেরানোর প্রেরণা নিতে দুই নম্বর গেটে শেবাগ তো আছেনই!