
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি◾
ঈদুল আযহার টানা ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। ঈদের চতুর্থ দিনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিন উদ্যানে প্রবেশ করেন প্রায় এক হাজার পাঁচশত পর্যটক। প্রবেশমূল্য বাবদ রাজস্ব আয় হয়েছে এক লক্ষ ঊনষাট হাজার সাতশত বিরানব্বই টাকা।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিকিট কালেক্টর ও কাউন্টার মাস্টার মোহাম্মদ আব্দুল মতিন জানান, ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের চাপ বেড়েছে। শুধু বুধবারেই রাজস্ব আয় হয়েছে এক লক্ষ ঊনষাট হাজার সাতশত বিরানব্বই টাকা। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বৃহস্পতিবার আরও বেশি দর্শনার্থীর আগমন ঘটবে এবং রাজস্ব আয় বাড়বে।
ঈদের দিন থেকে শুরু করে চতুর্থ দিন পর্যন্ত কমলগঞ্জের মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত, অরণ্য নিবাস ইকো রিসোর্ট, টিলাগাঁও ইকো পার্কসহ সব পর্যটন স্পটেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। বুধবার সকালবেলায় হঠাৎ দমকা হাওয়ার সঙ্গে শিলাবৃষ্টির পর আকাশ পরিষ্কার হতেই শুরু হয় পর্যটকদের ভিড়। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকবাহী গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা যায় লাউয়াছড়া ও মাধবপুর লেক এলাকায়।
টিকিট কাউন্টারে দেখা গেছে দীর্ঘ লাইন। নির্ধারিত মূল্যে টিকিট কেটে পর্যটকরা উদ্যানে প্রবেশ করেন। পরিবার নিয়ে আসা মানুষজন শিশুদের নিয়ে প্রকৃতির কোলে আনন্দ ভাগাভাগি করেন। দল বেঁধে আসা তরুণ-তরুণীরা ছবি তোলায় মগ্ন থাকেন। কেউ কেউ আবার ইকো-ট্যুরিস্ট গাইড নিয়ে প্রকৃতি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন।
সিলেট অঞ্চল ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা ছুটে এসেছেন এই সবুজ ভূখণ্ডে। এমনকি দেখা গেছে বিদেশি পর্যটকদের উপস্থিতিও।
চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক এনামুল হক চৌধুরী বলেন, “এই জায়গা আমার জন্মস্থান। এই মাটি ভুলে থাকা যায় না। সবুজ বন দেখে মনটা ভরে গেল।”
পর্যটকদের নিরাপত্তায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর ও বাহিরে সার্বক্ষণিক টহলে ছিলেন টুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা। এ ছাড়া ছিল পুলিশের বিশেষ টহল দল।
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাফর মো. মাহফুজুল কবির বলেন, “ঈদ উপলক্ষে সব পর্যটনকেন্দ্রে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আছে।”
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ সুত্রধর বলেন, “পর্যটকদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিতে উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক তদারকি করছে।”
কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জ পর্যটন উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক শাহিন আহমেদ বলেন, “ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে ঘুরাঘুরি। সবাইকে আমন্ত্রণ জানাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কমলগঞ্জ ঘুরে যাওয়ার জন্য।”
ঈদের আনন্দে পর্যটকদের মুখরতা ও প্রকৃতির সৌন্দর্যে এক অনন্য মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে কমলগঞ্জে। এমন আয়োজন শুধু স্থানীয় পর্যটনশিল্পই নয়, গোটা অঞ্চলের অর্থনীতিতেও নতুন সম্ভাবনার বার্তা দিচ্ছে।