
নিজস্ব প্রতিবেদক◾
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য মো. শামসুল ইসলাম জেল থেকে বের হয়েই দলবদল করেছেন। কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)-তে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় শুরু করলেন এই নেতা। শুধু তিনিই নন, আরও চারজন সাবেক-বর্তমান জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় নেতা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন ছেড়ে এলডিপিতে যোগ দিয়েছেন।
জানা গেছে, গেল ১৯ থেকে ২১ জুনের মধ্যে এলডিপির চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি মো. এয়াকুব আলীর কাছে তারা সদস্যপদের ফরম জমা দেন। এলডিপিতে যোগদানকারীরা হলেন—সাবেক ধর্মবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. শামসুল ইসলাম, উত্তর সাতকানিয়া যুবলীগের নেতা ও কেঁওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মনির আহমদ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য আবু তালেব সিকদার, সাহেব মিয়া এবং মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী রোকেয়া বেগম।
উল্লেখ্য, ২ মার্চ চকবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন শামসুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আন্দোলন দমনে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার অনুগত হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তিনি। বিপ্লব বড়ুয়ার মাধ্যমে কেন্দ্রে পদ পাওয়া এবং গণভবনে অবাধ যাতায়াত ছিল তার। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর এলডিপিতে যোগদান তার রাজনৈতিক অবস্থান পাল্টে দিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
দলবদলকারীদের মধ্যে মনির আহমদ আগে যুবলীগের নেতা থাকলেও ২০১৬ সালে কেঁওচিয়া ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দলীয় প্রার্থী ওচমান আলীকে পরাজিত করেন। পরবর্তীতে তিনি ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার পিএসের ঘনিষ্ঠ হন এবং দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। ইউপি সদস্য আবু তালেব সিকদার আন্দোলন-পরবর্তী মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন। সাহেব মিয়া ও রোকেয়া বেগম আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সামনে থাকলেও এখন এলডিপিতে সক্রিয় হচ্ছেন।
এই দলবদলকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। কেউ কেউ এদের ‘জাতীয় বেইমান’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন, আবার কেউ বলছেন—এটা পুরনো আওয়ামী লীগ নেতাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া মাত্র। জামায়াত শিবিরপন্থী নেতারাও এ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। স্থানীয়দের একাংশ বলছেন, এসব নেতারা আওয়ামী লীগের দুর্বলতা ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগ নিয়েই আজ এলডিপিতে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শামসুল ইসলাম বলেন, “আমি কেঁওচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচন করার কথা ভাবছিলাম। এলাকার মানুষ ও সমর্থকদের অনুরোধে এলডিপিতে যোগ দিয়েছি। তবে পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।”
মনির আহমদ জানান, “আমি আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক ছিলাম। কোনো পদে ছিলাম না। এখন এলডিপির একজন কর্মী হিসেবে কাজ করতে চাই।”
আবু তালেব বলেন, “আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে কিছুই পাইনি, বরং হয়রানির শিকার হয়েছি। তাই এলডিপিকে নতুন পথ হিসেবে নিয়েছি।”
সাহেব মিয়া বলেন, “আমি কখনোই হৃদয় থেকে আওয়ামী লীগ করিনি। কর্নেল অলি আহমদ একজন আদর্শ রাজনীতিবিদ। তার দলে থেকেই আগামীর রাজনীতি করতে চাই।”
রোকেয়া বেগম এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এলডিপির চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি মো. এয়াকুব আলী বলেন, “তারা আমাদের দলের প্রাথমিক সদস্য হয়েছেন। স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, তারা আওয়ামী লীগের কোনো পদে ছিলেন না। তারপরও যেহেতু নানা অভিযোগ উঠেছে, সেসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কেউ সুবিধাবাদী হয়ে এলডিপিতে ঢুকে থাকে, তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের এ দৃশ্য স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন হিসাব তৈরি করেছে। এলডিপির অভ্যন্তরে যেমন সতর্কতা দেখা যাচ্ছে, তেমনি আওয়ামী লীগেও এই দলবদল নিয়ে চলছে আত্মসমালোচনা। কেউ কেউ এটিকে ‘বিচারহীনতার প্রতিক্রিয়া’ বললেও, অনেকে বলছেন—দলীয় অনৈক্য ও তৃণমূল বিচ্ছিন্নতা এর মূল কারণ।
নতুন এই প্রেক্ষাপটে কেঁওচিয়ার রাজনীতিতে যে বড়সড় সমীকরণ বদলের আভাস মিলছে, তা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।