এস এম নুরুল আমিন,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রাম জেলায় একটি চাঞ্চল্যকর ও হৃদয় বিদারক ঘটনা।
পুলিশের তদন্তে শিশু হত্যা ঘটনায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেছে মূলহোতা।
২০১৩ ইং সালে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থানার দলদলিয়া ইউনিয়নের গনকপাড়া গ্রামস্থ্য মোঃ চাঁদ মিয়া ওরফে ভগলুর
০৭ বছরের শিশু “চম্পা” হত্যার মূল হোতা আসামী মিন্টু বসুনিয়া ও তার স্ত্রী মোর্শেদা বেগম দম্পতিকে ১১ বছর পলাতক থাকার পর গাজিপুর থেকে গ্রেফতার করেছে উলিপুর থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম।
২০১৩ ইং সালের জানুয়ারী মাসে উলিপুর থানাধীন দলদলিয়া ইউনিয়নের গনকপাড়া গ্রামস্থ্য জনৈক আশরাফ ডাক্তারের পুকুরে গ্রেফতারকৃত আসামী মিন্টু বসুনিয়া, মামলার বাদী মোঃ চাদ মিয়া ওরফে ভগলু (আসামী মিন্টুর আপন বড় ভাই) অন্যান্য সঙ্গী সাথীসহ মাটি কাটতে গিয়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একই এলাকার বজরুল এর সাথে বাদী ও আসামী মিন্টু মিয়ার কথা কাটাকাটি হয়, এক পর্যায়ে আসামী মিন্টু বসুনিয়া ও তার বড় ভাই অর্থাৎ অত্র মামলার বাদীসহ প্রতিপক্ষ বজরুলকে ভাড়ের বাংখুয়া দিয়ে মারপিট করে।
মারপিটের ফলে বজরুল গুরুত্ব অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
অতঃপর গুজব সৃষ্টি হয় যে, বজরুল মারা গেছে। উক্ত ঘটনার দায় হতে নিজেকে আড়াল করার জন্য এবং প্রতিপক্ষকে পাল্টা মামলায় ঘায়েল/ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে গ্রেফতারকৃত আসামী মিন্টু বসুনিয়া ও তার স্ত্রী মোর্শেদা বেগমদ্বয় পরস্পর যোগসাজোসে অত্যন্ত সু-কৌশলে আসামী মিন্টু বসুনিয়া তার আপন ভাতিজি অর্থাৎ বাদীর ০৭ বছরের শিশু কন্যা চম্পা’কে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বাড়ির পার্শ্ববর্তী বাঁশঝাড়ে লাশ ফেলে রেখে খোঁজাখুজি করতে থাকে।
খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে আসামী মিন্টু মিয়াই উক্ত বাঁশ ঝাড় হতে চম্পার লাশ সনাক্ত করে। মামলা রুজু হয় প্রতিপক্ষ বজরুল পরিবার গংদের বিরুদ্ধে।
ধৃত আসামী সহ বাদীর লোকজন প্রতিপক্ষ বজরুল এর ভাতিজা হাফিজুলকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উলিপুর থানার তৎকালীন ইন্সপেক্টর তদন্ত মোঃ জাকির উল ইসলাম চৌধুরী মামলাটি সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ আইনানুগ তদন্তকালীন সময়ে ঘটনার ভিন্নরুপ মোড় নেয়।
তদন্তের এক পর্যায়ে বাদীর আপন ভাই গ্রেফতারকৃত আসামী মিন্টু বসুনিয়াকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আসামী মিন্টু বসুনিয়া প্রতিপক্ষকে হত্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য নিজ স্ত্রীর সহযোগীতায় তার আপন ভাতিজি চম্পা’কে হত্যা করার ঘটনার বিষয়ে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমান পান।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসামী মিন্টু বসুনিয়াকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করেন। তদন্তকারী অফিসার বজরুল পরিবারগংদেকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি দিয়ে আসামী মিন্টু বসুনিয়া ও তার স্ত্রী মোর্শেদা বেগমদ্বয়ের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করেন। আসামী মিন্টু বসুনিয়া উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে তার স্ত্রী মোর্শেদা বেগমসহ দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর যাবৎ পলাতক হয়ে আত্নগোপনে থাকে।
পরবর্তীতে অফিসার ইনচার্জ, উলিপুর থানাসহ একটি চৌকস টিম বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে গ্রেফতারী পরোয়ানামূলে দীর্ঘদিনের চেষ্টায় গাজিপুর র্যাব-০৩ এর সহযোগিতায় উলিপুর থানা পুলিশের চৌকস টিম আসামীদেরকে গাজীপুর জেলার বড়বাড়ি জয় বাংলা তিন রাস্তার মোড় এলাকা হতে গ্রেফতার করে অদ্য ১২ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ উলিপুর থানায় নিয়ে আসে।
কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ রুহুল আমীন বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর ও হৃদয় বিদারক ঘটনা। আসামী প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেছে। অপরাধী যতই চতুরতা অবলম্বন করুক না কেনো একদিন না একদিন তাকে আইনের আওতায় আসতেই হবে, যার প্রমান সরূপ ২০১৩ সালের শিশু হত্যা মামলার মূলহোতা দম্পতিকে ১১ বছর পলাতক থাকার পর গ্রেফতার করলো উলিপুর থানা পুলিশ যা সম্ভব হয়েছে সুষ্ঠু পুলিশি তদন্তের মাধ্যমে। নিরাপদ কুড়িগ্রামের লক্ষ্যে আমাদের এই অভিযান নিয়মিতভাবে অব্যহত থাকবে আমরা সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা কামনা করি।
টেকসই নিরাপত্তা ও উন্নয়নের নির্মোহ সারথী কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ।