
মোঃ নাজমুল- পটুয়াখালী◾
প্রথমে দেখে বোঝার উপায় ছিল না—চারপাশের সাজসজ্জা, বাদ্যযন্ত্র, স্লোগান, মানুষের ভিড়, সেলফি আর ভিডিও। মনে হতে পারে কারো বিয়ের উৎসব চলছে। কিন্তু একটু কাছে গেলেই বোঝা যায়, এটি কোনো বিয়ের আনন্দ নয়; বরং এক অনন্য ভালোবাসার প্রকাশ।
মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর ঝাটিবুনিয়া গ্রামের কৃষক সোহাগ মৃধা তার নিজের হাতে লালন-পালন করা এক বিশাল কালো ষাঁড় উপহার দিতে রওনা হয়েছেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। ষাঁড়টির নাম রেখেছেন ‘কালো মানিক’। উদ্দেশ্য একটাই—এই কালো মানিক যেন তার প্রিয় নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হাতে তুলে দিতে পারেন।
কালো মানিকের গলায় দলের প্রতীকের মালা, গায়ে রঙিন কাপড়। গরুটির ওজন প্রায় ৩৫ মণ, দৈর্ঘ্য ১০ ফুট এবং উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। কুচকুচে কালো রঙের জন্য এলাকাবাসীর কাছে এর নাম হয়ে গেছে ‘কালো মানিক’।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকাল ১০টায় পটুয়াখালীর সুবিদখালি বাজার থেকে শুরু হয় ঢাকার পথে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। তিনটি সুসজ্জিত ট্রাক, ব্যান্ড পার্টি, সাউন্ড সিস্টেম এবং প্রায় অর্ধশত সঙ্গী নিয়ে রওনা হন সোহাগ মৃধা।
স্থানীয়দের অনুরোধে কালো মানিককে নিয়ে ঘোরানো হয় উপজেলা শহরের বিভিন্ন সড়কে। সকাল থেকেই সোহাগের বাড়িতে ভিড় জমায় শত শত মানুষ—শুধু একনজর কালো মানিককে দেখার জন্য।
সোহাগ মৃধা বলেন, “কালো মানিককে আমি সন্তানের মতো করে বড় করেছি। আমি নিজেই ঢাকায় গিয়ে নেত্রীর হাতে এটিকে তুলে দিতে চাই। আমার একটাই চাওয়া—আমার নেত্রী যেন এই উপহার গ্রহণ করেন।”
তবে বেগম খালেদা জিয়া উপহারটি গ্রহণ করবেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান, “সোহাগ আমার ভাতিজা। এই গরুটি ওদের পরিবারের শেষ সম্বল। আমরা অনেকবার বুঝিয়েছি, কিন্তু সে শুনছে না। এটি একজন নিবেদিত কর্মীর আবেগের বহিঃপ্রকাশ। আমরা চাই, মমতাময়ী মা এবং আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যেন উপহারটি গ্রহণ করেন।”
২০১৮ সালের শেষ দিকে মাত্র ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকায় একটি গাভি কিনে শুরু হয়েছিল এই স্বপ্নের যাত্রা। কয়েক দিনের মাথায় সেই গাভিটি জন্ম দেয় একটি বাছুর, আর সেই বাছুরই আজকের কালো মানিক।
ছয় বছরের নিবিড় পরিচর্যায় নিজের বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন এই দৃষ্টিনন্দন ষাঁড়। আর আজ সেই স্বপ্নের কালো মানিককে নিয়ে কৃষক সোহাগ ছুটছেন রাজধানীর পথে—প্রিয় নেত্রীর কাছে এক টুকরো ভালোবাসা পৌঁছে দিতে।