
ইসলামিক ডেস্ক◾
সন্ধ্যার আজান ধ্বনি শোনামাত্রই বহু ঘরে ঘরে যে ফলটি প্রথমে ইফতারের টেবিলে জায়গা পায়, তা হলো খেজুর। এই ছোট্ট ফলটি শুধুই কি রোজাদারদের প্রিয়? নাকি এতে রয়েছে এমন শক্তি, যা একটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধে ঢাল হয়ে দাঁড়াতে পারে?
ইসলাম ধর্মে খেজুরের গুরুত্ব নতুন কিছু নয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) খেজুরকে শুধু পছন্দ করতেন না, বরং তার জীবনচর্চার অংশ হিসেবেও তা গ্রহণ করতেন। তিনি বলেছিলেন—“যে ব্যক্তি সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খায়, সেদিন সে বিষ ও জাদু থেকে নিরাপদ থাকবে।” (সহীহ বুখারী)
আজকের আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানও যেন এই হাদীসের সত্যতা প্রমাণে পিছিয়ে নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, খেজুরে রয়েছে ভিটামিন এ, বি১, বি২, বি৬ এবং কে; আছে প্রাকৃতিক আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। এসব যৌগ মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে মজবুত করে, শরীরের কোষগুলোকে রাখে সক্রিয় এবং টক্সিন প্রতিরোধে সহায়তা করে।
একটি মাত্র খেজুরও শরীরে শক্তি জোগাতে পারে দিনের অনেকটা সময়ের জন্য। এতে থাকা প্রাকৃতিক চিনি (গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ) আমাদের মস্তিষ্কে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, খেজুর নিয়মিত খেলে ক্যানসার প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, অন্ত্র পরিষ্কার থাকে এবং হজম শক্তি ভালো হয়।
এখানেই শেষ নয়। খেজুর শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যেও রাখে ইতিবাচক প্রভাব। এতে থাকা ভিটামিন বি৬ ব্রেন কেমিক্যাল সেরোটোনিন ও ডোপামিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে ভূমিকা রাখে। ঘুমের সমস্যা, হতাশা এমনকি মাইগ্রেনেও খেজুর হতে পারে স্বস্তির উপাদান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস উচ্চ রক্তচাপ, রক্তস্বল্পতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ও হাড় ক্ষয়ের মতো সমস্যায় প্রতিরোধক রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। এটি অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্যও নিরাপদ এবং উপকারী একটি ফল।
আজওয়া খেজুর, মদিনা খেজুর, আম্বার বা সাফাওয়ি—প্রতিটি খেজুরেই রয়েছে নিজস্ব পুষ্টিগুণ ও স্বাদ। একে শুধু রমজানের খাবার বা ধর্মীয় অনুসরণ বললে ভুল হবে। এটি যেন প্রকৃতি ও আধ্যাত্মিকতার এক আশ্চর্য মিশ্রণ।
প্রশ্ন উঠতেই পারে—খেজুর কি শুধুই রসনা তৃপ্তির ফল? না কি এটি এক অপূর্ব ও পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য-নিয়ামত, যা শরীর-মন-আত্মাকে একসাথে রক্ষা করে?
আমরা যখন সুস্থতার পথ খুঁজি নানা ওষুধ ও পথ্য-নিয়মে, তখন প্রকৃতি আর বিশ্বাস যেন একসাথে জবাব দেয়—”একটি খেজুরই যথেষ্ট হতে পারে প্রতিরোধের ঢাল হিসেবে!”