শংকর কান্তি দাশ,জেলা প্রতিনিধি,চট্টগ্রাম: সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী ও আধুনিক করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ ও এমপিওভুক্তিসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় দেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলেও চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় দক্ষিন ঢেমশা চৌমুহনী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে এখনো লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। মনে হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশে এনালগ যুগে বসবাস। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারিভাবে বহুতল ভবন নির্মিত হলেও এ বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের অভাবে গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। বেঞ্চের অভাবে অনেক শিক্ষার্থীকে দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। আবার অনেক শিক্ষার্থী জায়গা না পেয়ে বাইরে ঘোরাফেরা করে দিন পার করছে। ফলে দিন দিন বেড়ে চলেছে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। অথচ উপজেলার মধ্যে সন্তোষজনক ফলাফল অর্জনসহ শিক্ষার আলো ছড়িয়ে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। শ্রেণিকক্ষ সংকট গুছাতে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বার বার ধর্না ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার দিলেও এখনো কোন সুরাহা মিলেনি। ফলে দিনের পর দিন বিদ্যালয়টিতে নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ।
খোঁজ নিয়ে ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার ঢেমশা ইউনিয়নের অন্তর্গত দক্ষিণ ঢেমশা চৌমুহনী এলাকাটি উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তর—পূর্বে অবস্থিত। এ এলাকাটিতে আনুমানিক ১৫ হাজার লোকের বসবাস। অথচ এলাকায় শিক্ষার প্রসারে সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে নেই কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিষয়টি উপলব্ধি করে ২০০৪ সালের তৎকালীন সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নুরুল আমিন (বর্তমানে মৃত) ওই এলাকায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এলাকার শিক্ষানুরাগী ও দানশীল ব্যক্তিদের সহায়তায় সাতকানিয়া সরকারি কলেজ সড়কের সাথে লাগোয়া চৌমুহনী এলাকায় প্রায় আড়াই’শ শিক্ষার্থী নিয়ে সেমিপাকা টিনশেট দিয়ে নির্মিত ভবনে শুরু হয় শ্রেণি কার্যক্রম। ২০০৮ সালে নিম্ন মাধ্যমিক ও ২০২২ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি পাই বিদ্যালয়টি। এর আগে ২০২০ সালের নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ ও ২০২৩ সালে নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্ত হয়। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ এমপিওভুক্তির নীতিমালা অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক, গণিত, ইংরেজি ও ইসলাম ধর্মসহ ৪ জন শিক্ষকের এমপিওভুক্তির জন্য ফাইলগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, বিদ্যালয়টিতে ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন। এর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। একজন জুনিয়র শিক্ষকসহ ১১ জন শিক্ষক রয়েছেন এ বিদ্যালয়ে। এছাড়া খন্ডকালীন হিসেবে রয়েছেন একজন অফিস সহকারী। একজন করে আয়া ও নৈশ প্রহরী। অন্যদিকে, ২০২৪ সালে প্রথমবারের মতো এ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করবে শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সময় সেমি—পাকা টিনশেড দিয়ে চার রুম বিশিষ্ট কক্ষে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু সম্প্রতি বয়ে যাওয়া বন্যায় ওই শ্রেণিকক্ষ গুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তবুও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে ঝুঁকি নিয়ে কয়েক দিন ক্লাস চলে। পরবর্তীতে অধিক ঝুঁকি বুঝতে পেরে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে এলাকাবাসীর সহায়তায় নির্মিত সেমি—পাকা টিনসেটের কয়েকটি রুমে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে ক্লাস করছেন।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, জরাজীর্ণ পুরাতন ভবনের দেয়ালে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। টিনের চালাগুলো ফুটো হয়ে কক্ষের মধ্যে রোদের আলো প্রবেশ করছে। ফলে বাধ্য হয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের টিনের চালা সেমিপাকা কক্ষে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের বসিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। দেখা গেছে প্রতিটি বেঞ্চে কমপক্ষে ৬ জন শিক্ষার্থী বসে ক্লাস করছেন। অনেক সময় লিখতে গেলে বেগ পেতে হচ্ছে। আবার অনেক শিক্ষার্থী বেঞ্চে জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়েও ক্লাস করছে।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইমা আক্তার, অষ্টম শ্রেণির নাফিজ উদ্দিন ও দশম শ্রেণির সিফাত আক্তার জানায়, গাদাগাদি করে বসার কারণে তারা লিখতে পারেনা। এমনকি শিক্ষার্থী যে দিন বেশি উপস্থিত থাকবে, সেদিন একটু দেরি করে বিদ্যালয়ে আসলে দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হয়। অনেক সময় শ্রেণিকক্ষে জায়গা না পেয়ে ক্লাস না করে বাড়ি ফিরে যেতে হয়।
শিরোনামঃ
নোটিশঃ
চট্টগ্রাম সাতকানিয়ায় শ্রেণিকক্ষ সংকটে গাদাগাদি বসে পাঠদান
- Reporter Name
- Update Time : ০৩:২৪:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৩
- ১৯১ Time View
Tag :
Popular Post