মোঃ হারুন অর রশিদ রিপন,শেরপুরের প্রতিনিধি: গত ৩০/০৯/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ সন্ধ্যা অনুমানিক ০৬.০০ ঘটিকার সময় ডিসিস্ট আরব আলী তার মিশুক অটোগাড়ী নিয়ে ভাড়া মারার জন্য নিজ বাড়ি শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী থানাধীন বনগাঁও পূর্বপাড়া হতে বের হয়। মধ্যরাতেও আরব আলী বাড়িতে না ফেরায় তার মা অত্র মামলার বাদী ছামেদা খাতুন (৫৪) তার ছেলে ডিসিস্ট আরব আলীর ব্যবহৃত মোবাইলে ফোন দিলে নাম্বারটি বন্ধ পায়।
পরবর্তী ০২/১০/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ সকাল অনুমানিক ০৮:০০ ঘটিকার সময় বাদীর ভাই মোঃ রবিউল ইসলাম তার বোনকে মোবাইল ফোনে জানায় যে, ঝিনাইগাতী থানাধীন রাংটিয়া দেওয়ানপাড়া সাকিনস্থ ফারুক দেওয়ান (৪২) পিতা- মৃত সুরুজ দেওয়ান এর বসত বাড়ীর ও ধান ক্ষেতের দক্ষিণ পাশের নালায় ডিসিস্ট আরব আলীর মৃত দেহ পড়ে আছে। সংবাদ পেয়ে বাদী ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃত দেহটি দেখে তার ছেলে আরব আলীর লাশ বলে শনাক্ত করে।
পরে ডিসিস্টের মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে ঝিনাইগাতি থানায় এজাহার দায়ের করলে ঝিনাইগাতি থানায় মামলা নং-০৪ তারিখ- ০২/১০/২০২৩ খ্রিঃ ধারা-৩৯৪/৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়।
মামলাটি রুজু হওয়ার পর হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য দ্রুত সময়ের মধ্যে উদঘাটন, আসামি গ্রেফতার ও মামলার যথাযথ তদন্তের লক্ষ্যে জেলা পুলিশের জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করেন শেরপুর জেলার সম্মানিত পুলিশ সুপার জনাব মোনালিসা বেগম, পিপিএম-সেবা।
মাননীয় পুলিশ সুপার মহোদয় ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনসহ ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের সনাক্ত পূর্বক জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।
পুলিশ সুপার, শেরপুর মহোদয়ের দিকনির্দেশনায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) জনাব মোঃ খোরশেদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জনাব মোঃ সাইদুর রহমান ও সহকারী পুলিশ সুপার (নালিতাবাড়ী সার্কেল) জনাব মোঃ দিদারুল ইসলামের সার্বিক তত্ত্বাবধানে জেলা গোয়েন্দা শাখার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আবুল কালাম আজাদ, এসআই/মোঃ আবু বকর সিদ্দিক, ঝিনাইগাতী থানার এসআই/মোঃ মাসুদ রানা ও এলআইসি শাখার এসআই/আশিকুর রহমান, এসআই/ মোঃ হেলাল উদ্দিন সহ সঙ্গীয় ফোর্সসহ জেলা গোয়েন্দা শাখা ও জেলা এলআইসি শাখার মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে ঝিনাইগাতী থানাধীন তিনানী এলাকা হতে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে মোঃ শামীম মিয়া @ উছমান হেদা কে গ্রেফতার করা হয়, যিনি ডিসিস্ট আরব আলীর খালাতো ভাই। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার মিরপুর হতে মোঃ সোহেল রানা (২৫) কে গ্রেফতার করা হয়।
পরবর্তীতে উভয়ের তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অপর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি যার নাম মোঃ হামিদ সোজা কে শেরপুর হতে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ছিনতাইকৃত অটোরিক্সা কোথায় রেখেছে এবং কি ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে আরব আলীকে হত্যা করেছে গ্রেফতারকৃত আসামিরা স্বীকার করে।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে জেলা গোয়েন্দা শাখার চৌকশ দল এসআই/আবু বকর সিদ্দিক এর নেতৃত্বে তাৎক্ষনিকভাবে অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকৃত অটোরিক্সা ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ০২ টি চাকু উদ্ধার করে এবং মোঃ বাবুল মিয়া নামক ব্যক্তির হেফাজত থেকে অটো রিক্সাটি উদ্ধার করে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামিদের মধ্যে যারা সরাসরি হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, আসামিরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া এবং অটোরিক্সাটি ছিনতাই করার উদ্দ্যেশে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ডিসিস্ট আরব আলী (২১) কে গত ইং-৩০/০৯/২০২৩ তারিখ রাত অনুমান ১০.৩০ টার সময় ঘটনাস্থলে হত্যা করে লাশ ফেলে অটোরিক্সা নিয়ে পালিয়ে যায়। সার্বিক দৃষ্টিতে এটি একটি চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস হত্যাকান্ড। যা পরবর্তীকালে শেরপুর জেলা পুলিশের সফল অভিযানে দ্রুততম সময়ে ছিনতাইকৃত অটোরিক্সা উদ্ধার, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু, ডিসিস্ট এর মোবাইল ফোন এবং ঘটনার সাথে যারা সরাসরি জড়িত তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হয়। সার্বিক দৃষ্টিতে অপরাধটি অটোরিক্সা ছিনতাইয়ের সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রকাশ পায়।
উদ্বারকৃত আলামতের বর্ণনাঃ
১। ছিনতাইকৃত একটি ব্যাটারি চালিত অটোরিক্স।
২। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ০২ টি চাকু।
৩। ভিকটিমের ব্যবহৃত কালো রংয়ের বাটন মোবাইল ফোন।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর ২০২৩) পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস আরব আলী হত্যাকাণ্ডের মূলরহস্য উদঘাটন, আসামি গ্রেফতার ও আলামত উদ্ধার বিষয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে ব্রিফিং করেন শেরপুর জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব মোনালিসা বেগম পিপিএম-সেবা।
ব্রিফিং কালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) জনাব মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জুয়েল পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) জনাব মোঃ খোরশেদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জনাব মোঃ সাইদুর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার (নালিতাবাড়ী সার্কেল) জনাব মোঃ দিদারুল ইসলাম সহ জেলা পুলিশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।