মনিরুজ্জামান,টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি: মহান মে দিবস উপলক্ষে বুধবার (১ মে) টাঙ্গাইলে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ এর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হইছে। এবং উভয় পক্ষ টাঙ্গাইল পৌর শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো ভাবেই জেলা প্রশাসন উভয়পক্ষ পৌর উদ্যানে সমাবেশে করার জন্য অনুমতি দেননি প্রশাসন। দেখা যায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ পৃথক দু’টি ব্যানারে। এক পক্ষে রয়েছে বিগত জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনে ‘নৌকা’ প্রতীকের সমর্থকরা জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের ব্যানারে। অপরদিকে রয়েছে ‘ঈগল’ প্রতীকের সমর্থকরা টাঙ্গাইল পৌর শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে শ্রমিক সমাবেশের ডাক দিয়েছে। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। আর এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এর আগে চলতি মাসের (১৮ এপ্রিল) ঈগল প্রতীকের সমর্থকেরা টাঙ্গাইলের সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে সমাবেশ আহ্বান করেছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, ধর্ষণ মামলার আসামী শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদ থেকে সদ্য অব্যাহতি প্রাপ্ত গোলাম কিবরিয়া বড় মনিকে গ্রেপ্তার ও বিচারের। অপরদিকে, জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের ব্যানারে একই দিন একই সময় শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। তাদের দাবি ছিল, একটি কুচক্রী মহল বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনে অবৈধ হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে। তারা শ্রমিকদের নানাভাবে অত্যাচার, নির্যাতন করছে। এর প্রতিবাদে সমাবেশের আহ্বান করা হয়েছিল। ওই সময় জেলা প্রশাসন কাউকে পৌর উদ্যানে সমাবেশ করতে দেননি। চলতি মাসের (১৭ এপ্রিল) রাতে পৌরসভার সামনে ও শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে কয়েক দফা ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছিল। ককটেল বিস্ফোরণের পর থেকে পুরো শহরে আতঙ্ক বিরাজ করে। এসব কারণে মহান মে দিবসে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সমাবেশ কথার শুনার পর শহরে আবারও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে পৌর শহরের শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সকাল ১০ টায় মে দিবস উপলক্ষে শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে বিগত নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা উপস্থিত থাকবেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি। উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুক। আরও উপস্থিত থাকবেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান আহমেদ শুভ এমপি, সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনুপম শাহজাহান জয় এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও বিগত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী ডা. কামরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নৌকা প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী এডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুন, কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকা প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ববৃন্দরা উপস্থিত থাকবেন। এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি বালা মিয়া। সঞ্চালনায় থাকবেন জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি।
অপরপক্ষ টাঙ্গাইল পৌর শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে পৌর শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ মাঠে মে দিবস উপলক্ষে সকাল ১০ টায় শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে বিগত নির্বাচনে ঈগল প্রতীকের সমর্থকরা উপস্থিত থাকবেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি এডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের। উদ্বোধন হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য (স্বতন্ত্র) ছানোয়ার হোসেন। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঘাটাইল-৩ আসনের এমপি (স্বতন্ত্র) আমানুর রহমান খান রানা। পৌর শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হক আলমগীরের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত থাকবেন সাবেক এমপি হাছান ইমাম খান হোসেন হাজারী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মির্জা মঈনুল হোসেন লিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান খান সোহেল, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক বদিউজ্জামান ফারুক, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ওয়াজির হাসান খান শরীফ হাজারী, পৌর শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উদয়লাল গৌড়সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মীরা জানান, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এ রকম পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে। আমরা যারা কর্মী রয়েছি তারা মহাবিপাকে পড়েছি। কে কার পক্ষে যাবো সে নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের এমন বিভক্তি বা কোন গ্রুপ চাই না। আমরা সুষ্ঠু রাজনীতি চাই। সবাই একত্রিত হয়ে দলকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় সে লক্ষ্যে কাজ করতে চাই। এ রকম কোন গ্রুপিং চললে দলের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। অটোচালক কাদের মিয়া বলেন, মে দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের শ্রমিক সমাবেশ দিয়েছে। দুই গ্রুপের পক্ষ থেকে সমাবেশে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ছোট মনির এমপিদের গ্রুপের সমাবেশে যাবো, পরের দিন পৌর মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীরের লোকজন আমাকে গাড়ি চালাতে দিবে না। কোন পক্ষে যাবো সে নিয়ে চিন্তায় আছি। আমরা গরীব মানুষ কোন ঝামেলা চাই না। স্থানীয় বাসিন্দা নাজমুল হোসেন বলেন, শুনতে পারছি মে দিবসে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ শ্রমিক সমাবেশ করবে। এর আগে পৌর উদ্যানে দুই গ্রুপের নেতারা সমাবেশ করতে চেয়েছিল। সমাবেশের আগের দিন রাতে পৌর উদ্যানে ও পৌরসভার সামনে বেশকয়েকটি ককটেক ফুটেছে। সেই ভয় কাটতে না কাটতে আবার মে দিবসে দুইপক্ষ সমাবেশ ডেকেছে। আমরা শহরবাসী খুবই ভয়ে আছি। আমরা কোন মারামারি ও সংঘাত চাই না।
টাঙ্গাইল পৌর শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, সংসদ নির্বাচনের জেড় ধরে দলের বিভক্তি হয়েছে। আমাদের সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতৃবৃন্দ থাকবেন। জেলা আওয়ামী অনেক নেতৃবৃন্দকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। কে আসবে কে আসবে না সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।
জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি বালা মিয়া বলেন, আমরা শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষে থেকে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দদের আমাদের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগের বিভক্তি আছে কি নেই সেটা আমার জানার বিষয় না।
দুইপক্ষের সমাবেশকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ডিআইও-১ পুলিশ পরিদর্শক হারেছ আলী বলেন, মে দিবস উপলক্ষে কোন রুপ সংঘাত এড়াতে কোন পক্ষকেই টাঙ্গাইল পৌর উদ্যানে সমাবেশের জন্য আমরা অনুমতি দেয়নি। পৃথক দুই স্থানে তাদেরকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ সব্বোর্চ সর্তক অবস্থানে থাকবে বলে জানান।