তাহিরপুর উপজেলায় ভূমির খাজনা আদায়ের নামে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে খাজনা আদায়ের রশিদে টাকার পরিমাণ কম লিখে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ডিহিভাটি’র ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো: রুহুল আমিন এর বিরুদ্ধে। অভিযোগ আছে, টাকা না দিলে অনুমোদন দেওয়া হয় না খাজনা আবেদনের হোল্ডিং এর। তবে কিছু কিছু হোল্ডিং বিনা টাকায় অনুমোদন দিলেও তাতে পাহাড় পরিমাণ টাকা উল্লেখ করা হয় অথবা কোনো কারণ ছাড়াই করা হয় ঐ আবেদন বাতিল। পরবর্তীতে ঐ কর্মকর্তাকে টাকা (ঘুষ) দিলে ইচ্ছে মতো ক্ষমতার অপব্যবহার করে খাজনার পরিমাণ কমিয়ে/বাড়িয়ে দেন। শুধুমাত্র খাজনা আদায়ের ক্ষেত্রেই নয় নামজারির প্রতিবেদন দেওয়ার ক্ষেত্রেও টাকা (ঘুষ) নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি দলিল কিংবা আগত খতিয়ান একের অধিক হলে প্রত্যেকটির জন্যেই তাকে আলাদা আলাদা টাকা দিতে হয়। তার ইচ্ছেমত টাকা না দিলে সেবা গ্রহীতারাদেরকে বিভিন্ন কাগজপত্রের কিংবা নামের জটিলতা দেখিয়ে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করা হয়। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো: রুহুল আমিন। তিনি বলেন, এসব অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রাণোদিত, মিথ্যা ও বানোয়াট।
অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয় উল্লেখ করে সেবা গ্রহীতা ফজলুর রহমান জানান, জমির খাজনা আদায়ের জন্য ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো: রুহুল আমিন কে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন, কিন্তু তিনি হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ৫শত টাকার একটি খাজনা আদায়ের রশিদ। রশিদে টাকার পরিমাণ কম কেন? এমন প্রশ্ন করলে ঐ কর্মকর্তা ক্ষিপ্ত হয়ে তার সাথে অশালীন আচরণ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্য আরেকজন বলেন, খাজনার হোল্ডিং অনুমোদন এর জন্য ঐ কর্মকর্তার ব্যবহৃত মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ) এর মাধ্যমে টাকা দিয়েছেন। টাকা দেওয়ার পরেই দেওয়া হয়েছে খাজনার হোল্ডিং অনুমোদন। ঐ কর্মকর্তা কতৃক ব্যবহৃত মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ) এর মাধ্যমে দেওয়া টাকার বিবরণ (স্কীনসর্ট) এসেছে এই প্রতিবেদকের হাতে। তাতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে কবে কখন পাঠানো হয়েছে সেই টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেবা গ্রহীতা বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারগণ বা ওয়ারিশদের আইডি কার্ড দিয়ে নিবন্ধন করে খতিয়ান সাবমিট করে ওয়ারিশ সূত্রে খাজনা আদায় করে পরবর্তীতে নামজারি করে নিতে হবে। কিন্তু সেখানেও শুধুমাত্র তার অফিসেই ওয়ারিশদের নামে নিবন্ধিত হোল্ডিং এর খাজনার অনুমোদন দেওয়া হয় না। আবার মোটা অংকের টাকা দিলে দেওয়া হচ্ছে অনুমোদন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্য আরেকজন বলেন, আমরা যেটুকু জানি যদি কোন নাগরিকের ভূমির পরিমাণ ২৫ বিঘার নিচে হয় তাহলে তাকে প্রত্যেক হোল্ডিং এর জন্যে বছরে মাত্র ১০ টাকা খাজনা পরিশোধ করতে হয়। আর এ উপজেলার ৯৯% মানুষের জমি ২৫ বিঘার নিচে। এই কর্মকর্তাকে টাকা না দিলে তিনি হয়ত প্রত্যেক নাগরিককেই তাদের মালিকানা ২৫ বিঘার উর্ধ্বে দেখিয়ে দেন, তাই খাজনা পরিমাণ এতো বেশী দাড়ায়। তাছাড়া এই কর্মকর্তা বলেছেন তার হাত অনেক লম্বা আমরা অভিযোগ করলে তিনি আমাদেরকে অভিযোগের মজা শিখিয়ে দেবেন। আমরা নিরীহ মানুষ এই ভয়ে আমরা অভিযোগ করিনা। তবে তার অফিস থেকে যে খাজনাগুলো আদায় করা হয়েছে ওই ভূমির মালিকদেরকে ডেকে এনে সুষ্ঠু তদন্ত করলেই সব বেড়িয়ে আসবে।
তাহিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান রনি বলেন, এবিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।