মোঃ মাসুদ রানা,উপজেলা প্রতিনিধি, কলাপাড়া (পটুয়াখালী): দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে মাঠে ততই বিভিন্ন উন্নয়নের প্রচার প্রচারণা চালিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে তৎপর হয়ে উঠেছেন আওয়ামীলীগ মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বিএনপি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকলেও দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালণসহ শক্ত অবস্থান তৈরী করছে দলটি। দেশের গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। আওয়ামীলীগ সরকারের বিগত পনের বছরে এলাকাটি ঘিরে রয়েছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিকল্পনা। চলমান রয়েছে একাধিক মেগা প্রকল্প। কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্র বন্দর, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, সাবমেরিন ল্যান্ডিং ষ্টেশন, শের-ই-বাংলা নৌ-ঘাঁটি, চার ও ছয় লেন সড়ক, শেখ কামাল সেতু , শেখ জামাল সেতু, শেখ রাসেল সেতু , সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু , টিয়াখালী সেতু , চাকামইয়া চীন মৈত্রী সেতু দেশের পর্যটন শিল্পসহ অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, এরশাদ সরকার পদত্যাগ পরবর্তী ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যতীত ১৯৯১ সালের পর থেকে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিটিতে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিজয়ের কারণে আসনটিতে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা বরাবরই বেশি থাকে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আ’লীগের নৌকা প্রতীকে অধ্যক্ষ মো. মহিব্বুর রহমান রেকর্ড সংখ্যক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে। আগামী নির্বাচনে পুনরায় মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন এমন প্রত্যাশা করেন তিনি। দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে জনগনের দোরগোড়ায় গিয়ে সরকারের বহুমুখী উন্নয়নের প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি।
সোমবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, অষ্টম, নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি থেকে পরপর তিন বার নির্বাচিত সাংসদ, কলাপাড়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদার দলীয় মনোনয়ন লাভের জন্য কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখে চলছেন এবং জন্ম থেকেই আওয়ামীলীগ পরিবারের সন্তান দাবী করে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির দৌড়ে যুক্ত হয়েছেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর আপন ভাই অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) মো. হাবিবুর রহমান মিলন। আসনটি থেকে নৌকা প্রতীকে দুই বারের বিজয়ী সাংসদ প্রয়াত আনোয়ার-উল ইসলামের ছেলে আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সাবেক সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য আবদুল্লাহ আল-ইসলাম লিটন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. শামীম আল সাইফুল সোহাগ, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির নেতা নীহার রঞ্জন সরকার মিল্টন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ নেতা মুরসালিন আহম্মেদ, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ সৈয়দ নাসির উদ্দিন, কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব তালুকদার, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. নাসির উদ্দিন ও জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিষ্টার জুনায়েদ হাসিব দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকেট চাইবেন।
এদিকে আলোচনায় রয়েছে বিএনপির ২ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী । বিশ্লেষকরা মনে করেন, সুদীর্ঘ বছর ক্ষমতায় না থেকেও দলটি সাংগঠনিক ভাবে যথেষ্ট সুসংগঠিত রয়েছে। এ অবস্থায় যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহন করে এবং দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী না হলে আসনটিতে তাদের জয়ের যথেষ্ট সম্ভাবনা বিদ্যমান রয়েছে। দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি এবিএম মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচন মানে জনগনের রায়। যা ভোটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু বর্তমান সরকারের অধীনে ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। বিএনপি মনে করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই দলীয় সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাবো না। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সংসদ প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মো. মনিরুজ্জামান মনির জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। দলের স্বার্থে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তাকে বিজয়ী করতে সকল নেতা-কর্মীদের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন বলে জানান তিনি।
অপরদিকে, এ আসনটিতে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) শিথিল অবস্থা থাকলেও প্রার্থী তালিকায় জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আ: রাজ্জাক খানের সন্তান মাছুম খানের নাম শোনা যাচ্ছে এবং চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ধীরে ধীরে ভোটের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কলাপাড়া উপজেলায় বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৩ টিতে আ’লীগের নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পরাজিত করে হাত -পাখা মার্কা বিজয়ী হয়েছে। এছাড়া ৪টিতে বিজয়ীদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দী ছিলেন দলটির প্রার্থীরা। ওই ইউনিয়নগুলোতে ভোটের হিসাব জাতীয় নির্বাচনে হাত পাখার পক্ষে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করবে বলে দাবি করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। দলটির এক মাত্র প্রার্থী হিসেবে মুফতি হাবিবুর রহমান নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকলেও দল এখনও এ আসনে কোন প্রার্থী নির্ধারণ করেনি বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়াও জাসদের প্রবীন সাংবাদিক বিশ্বাস শিহাব পারভেজ মিঠু আসনটি থেকে ১৪ দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
সাধারণ ভোটাদের মতে, জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস। তারা চান তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ভোটাধিকারকে সুষ্ঠু ভাবে প্রয়োগ করতে। স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা রাষ্ট্রের জন্য নির্বাচীত একজন ভালো সংসদ সদস্য এবংএকটি জনকল্যাণমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে।