মোঃ হারুন অর রশিদ,
বগুড়া জেলা প্রতিনিধি: সোমবার সকাল আটটার সময় বিখ্যাত মহাস্থান হাটে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় শীতের সবজিতে ভরপুর উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত সবজির পাইকারি বগুড়ার মহাস্থানহাট। শীত মৌসুমে মহাস্থানহাট প্রাঙ্গণে প্রচুর পরিমাণে শীতের সবজি দেখা গেছে৷ ডিসেম্বরের শুরুতেই সবজির দাম অনেক ভাল ছিল। বাজারে ব্যাপক আমদানির ফলে দামে ধস পড়েছে বগুড়ার বিখ্যাত পাইকারি মোকাম মহাস্থানহাট। এতে ভোক্তাদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এলেও অস্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে কৃষকেরা, কাক ডাকা ভোর থেকে সারি সারি অটোভ্যান, ভটভটি, মিনি ট্রাক ও হলার যোগে বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকেরা তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত শীতের সবজি নিয়ে মহাস্থানহাটে বিক্রির জন্য এসেছে। শীতের চমকপ্রদ সবজির তরতাজা দৃশ্যটি দেখে মনে হচ্ছিল কৃষকদের যেন এক মিলন মেলা। হাটের এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত সবজি আর সবজি। বগুড়ার এ হাটে এতটাই সবজির আমদানি যে হাটের জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা অন্য সবজিবাহী যানবাহনদের অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়। এ সবকিছুই যেন সাজানো গুছানো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে বাজারে সবজি নিয়ে এসে কৃষকদের এখন পরিবহন খরচ মিলছে না। কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে দুর্দশা আর হতাশায় ভুগছে এ অঞ্চলের কৃষক।
মোকামতলা থেকে মহাস্থান হাটেরে ফুল কপি বিক্রি করতে আসা কৃষক আজিজার রহমান বলেন,
আমাদের উৎপাদিত সবজি আমরা মহাস্থানহাটে
বিক্রি করি। কিন্তু বর্তমান আজকে যেভাবে সবজির দাম কমে গেছে তাতে আমাদের পরিবহন খরচ নিজের পকেট থেকে দিতে হবে।
সদরের লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের গৌরিদাসপুর গ্রামের কৃষক সুজন মিয়া জানান, ২০শতক জমিতে ফুল কপি চাষ করেছি। লাভ তো দূরের কথা খরচের টাকা তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ বছরে তেল সার কীটনাশক ও বীজের আকাশ ছোয়া দাম। একারণে সবজি উৎপাদনে খরচ অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কিন্তু অনেক বেশি হয়েছে। এমতাবস্থায় বাজার পরিস্থিতি এমন থাকলে আমাদের পথে বসা ছাড়া কোন উপায় নেই। শুধু কৃষকেরাই নয় বাজার এমন ধসের কারনে খুচরা বিক্রেতাও ধাক্কা খাচ্ছেন। মহাস্থান হাটের খুচরা সবজি বিক্রেতা শ্রী নির্মল রাজভর জানান, সবজির দাম বেশি থাকলে তাদের লাভও ভালো হয়। আগে এক কেজি সবজি বিক্রি করলে ৫ থেকে ১০ টাকা লাভ হতো। সেখানে সবজির প্রতি কেজি যদি ২ থেকে ৫ টাকা হয় তাহলে লাভ কীভাবে হবে। আজ যে দামে সবজি কিনছি রাতেই তার দাম অর্ধেকে নামছে। সবজির দরপতনের কারনে আমাদের চালান তোলা কঠিন হয়ে পড়েছে।
মহাস্থান সবজির পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ফুল কপি ৩ টাকা কেজি (১২০ টাকা মণ) , মুলা ৫টাকা কেজি (২০০ টাকা মণ) প্রতি কেজি নতুন আলু ৫০ টাকা কেজি (২হাজার টাকা মণ), টমেটো, ৫০ টাকা কেজি, ৪০ টাকা কেজি, বরবটি ২০ থেকে থেকে ৪০ টাকা, শসা ৩০, করলা ৫০ টাকা কেজি, পটোল ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, বিচিওয়ালা শিম ১৫ টাকা কেজি, গোল বেগুন ২০ থেকে টাকা কেজি, পেঁপে ২০টাকা কেজি, মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকা কেজি, পাতা পেয়াজ ২৫ টাকা কেজি, ধনে পাতা ২০ টাকা কেজি।
হাটে অন্যান্য সবজির দাম নিম্নমুখিই দেখা গেছে।
মহাস্থান হাট কাঁচা ও পাকা মাল আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, শীত শুরুতেই সবজির দাম ছিল স্বাভাবিক। হঠাৎ ২ দিনে বাজার ধস নেমেছে৷ এর কারণ হিসেবে তিনি পর্যাপ্ত উৎপাদন ও আমদানি কে দায়ী করছেন। প্রয়োজনের চেয়ে অধিক সবজি হাটে দেখা গেছে। মহাস্থান হাটের সবজি প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ ট্রাক দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। শীত মৌসুমে সবজির কারনে মহাস্থান হাটে কর্মস্থান যুগেছে শতশত নারী/পুরুষ লেবার শ্রমিকদের৷ সুফল ঘটেছে পরিবহন ব্যবসায়ীদের।
শিরোনামঃ
নোটিশঃ
বগুড়ার বিখ্যাত মহাস্থান হাটে সবজির বাজারে ধস, ফুলকপি ৩ টাকা মুলা ৫ টাকা কেজি
- Reporter Name
- Update Time : ০৮:১৯:১৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
- ৪৫ Time View
Tag :
Popular Post