আরমান হোসেন খান,জেলা প্রতিনিধি,ঢাকাঃ তাপপ্রবাহে সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় পিচ গলে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে দেশব্যাপী চলমান ৩৮ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সড়কের পিচ গলে যাওয়ায় গাড়ি চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে।
সড়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিম্নমানের বিটুমিন দিয়ে সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কারনে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বেশিরভাগ সময় ৫২ থেকে ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকার পরও সড়কের পিচ গলে না। আমাদের দেশে ভেজাল বা নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার করা হয় বলে মাত্র ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পিচ গলে যাচ্ছে।
দেশে সড়ক-মহাসড়কে সাধারণত যে বিটুমিন ব্যবহার হয় তার মান ৬০-৭০ গ্রেডের। এই পিচের গলনাঙ্ক ৪৯-৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু কয়েক দিনের তাপমাত্রা ছিলো ৪০-৪১ ডিগ্রি। এই তাপমাত্রায় পিচ গলে যাওয়ায় ব্যবহার করা বিটুমিনের মান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন সড়ক বিশেষজ্ঞরা।
বুয়েটের কেমিক্যাল প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড.মো.ইয়াসির আরাফাত খান বলেন, যশোর সহ দেশের বিভিন্ন স্হানে সড়কের পিচ গলে যাওয়ার অন্যতম কারণ নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার। এখানে যে বিটুমিন ব্যবহার করা হয় তা কতো তাপমাত্রার জন্য সহনীয় সেই মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয় কি না এ বিষয়ে সংশয় রয়েছে।
বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে যেমন সড়ক দূর্ঘটনা ঘটে, তেমনি ত্রুটিপূর্ণ রাস্তার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারে আমদানি করা ভেজাল বিটুমিন ব্যবহার করায় সড়কের স্থায়িত্ব হ্রাস পাচ্ছে। এতে সড়ক সংস্কারের পেছনে প্রতি বছর মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। মূলত আমদানি পর্যায়ে মান নিয়ন্ত্রণ না করার কারণে একটি সংঘবদ্ধ চক্র নির্বিঘ্নে নিম্নমানের বিটুমিন আমদানি অব্যাহত রেখেছে। এ অবস্থায় অন্যসব পণ্যের মতো বিটুমিনের মান নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়েছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা। সড়ক নির্মাণের অন্যতম উপাদান বিটুমিন আমদানি ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না কেউ। অভিজ্ঞ মহলের মতে,বিটুমিন আমদানির পুরো প্রক্রিয়াটিই প্রশ্নবিদ্ধ।
বিএসটিআই, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও বুয়েটের মান পরীক্ষা ছাড়াই বিটুমিন দেশে আনা হচ্ছে। আর বন্দরে কাস্টমসের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এগুলো ছাড়পত্রও পেয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। নইলে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে নিম্নমানের এসব বিটুমিন ব্যবহার হতে থাকবে। দ্রুত রাস্তা নষ্ট হবে,খানাখন্দ তৈরি হবে,দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাবে। আর দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্চা যাবে। বিটুমিনের সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বিটুমিনের মান নিয়ন্ত্রণে কঠোর ভূমিকা রাখবেন – এটাই আমাদের সকলের প্রত্যাশা।