
খাইরুল ইসলাম- ঢাকা◾
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৯তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা কার্যকর হয়েছে ২২ মে থেকে। তবে নাম পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নারী হলের নতুন নাম ‘জুলাই-৩৬ হল’ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন, সৃষ্টি হয়েছে তীব্র সমালোচনা।
সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নাম পরিবর্তনের তালিকায় রয়েছে দুইটি আবাসিক হল, প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন, স্টেডিয়াম, স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটি গেইট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিজয়-২৪ হল’ এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘জুলাই-৩৬ হল’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ প্রকাশ না করা হলেও ধারণা করা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় অর্জন ও শহীদদের স্মরণে এই নামকরণ করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের একাংশ বলছেন, এই নামগুলো প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা ছাড়া হঠাৎ পরিবর্তন করায় বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে এবং ঐতিহাসিক নাম হারিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে ‘জুলাই-৩৬ হল’ নাম নিয়ে। এক নারী শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন,
“মেয়েদের হলের নাম জুলাই-৩৬? এটা কী ধরনের নাম! কেউ হঠাৎ করে শুনলে বুঝবে না এটি মেয়েদের হল নাকি ছেলেদের। নাম বদলাতেই যদি হয়, অন্তত মেয়েদের অন্যান্য হলের নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাখা যেত।”
অন্যদিকে, শেখ রাসেল স্কুলের নতুন নামকরণ হয়েছে ‘রাবি মডেল স্কুল’, শেখ কামাল স্টেডিয়াম হয়েছে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়াম’। এছাড়া একাডেমিক ভবনের মধ্যে ড. কুদরত-ই-খুদা ভবন হয়েছে ‘জাবির ইবনে হাইয়ান ভবন’, ড. ওয়াজেদ আলী মিয়া ভবন হয়েছে ‘জামাল নজরুল ভবন’। কাজলা গেট এবং বিনোদপুর গেটের নতুন নাম যথাক্রমে ‘শহীদ সাকিব আঞ্জুম গেইট’ ও ‘শহীদ আলী রায়হান গেইট’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক মনে করছেন, এমন পরিবর্তন কোনো ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা ও শিক্ষার্থী মতামত ছাড়াই করা উচিত হয়নি। একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন,
“বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি নামের পেছনে ইতিহাস ও আবেগ জড়িত। হঠাৎ করে নাম বদলে দেওয়ার চেয়ে বরং নতুন স্থাপনায় নতুন নামকরণ করলেই ভালো হতো।”
নাম পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এককভাবে নেওয়া পদক্ষেপ হিসেবে অনেকেই দেখছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, ঐতিহ্য এবং গৌরব ধরে রাখতে হলে ভবিষ্যতে এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের আগে শিক্ষার্থীদের মতামত গ্রহণ জরুরি।