
আরিফুর রহমান তীব্র–লক্ষ্মীপুর সদর◼️
লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদলের নেতা শহীদ সোলেমান উদ্দিন জিসান—একটি পরিচিত নাম এখন জেলা রাজনীতির মাঠে। কিন্তু কে এই জিসান? কেমন ছিল তার শৈশব, পরিবার ও রাজনৈতিক পথচলা? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই ফিরতে হয় কিছুটা অতীতে।
পরিবারের দিক থেকে শহীদ সোলেমান উদ্দিন জিসান ছিলেন একটি শিক্ষিত ও সরকারি চাকুরিজীবী পরিবারে বেড়ে ওঠা সন্তান। তার বাবা কর্ম কমিশন সচিবালয়ের একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। বড় জেঠা অডিট অধিদপ্তরের সহকারী সুপার, ছোট চাচা বাংলাদেশ বিমানের কাস্টমস অফিসার এবং মেঝো জেঠা পারিবারিক সম্পত্তি দেখাশোনা করতেন। পরিবারটি মূলত রাজনীতিকে একপ্রকার এড়িয়ে চলত।
তবে জিসানের রাজনৈতিক পথচলা শুরুতেই পরিবারে অস্বস্তি তৈরি করে। রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর কিছুদিন পরিবার থেকে দূরত্ব তৈরি হলেও সময়ের সঙ্গে সবই স্বাভাবিক হয়।
১৯৯৪ সালে তার বাবার মৃত্যু হয়। পেনশনের টাকা দিয়ে এক টুকরো ঘর তৈরি করেন জিসান। সে ঘর ছিল বিএনপির রাজনীতির জন্য একটি অস্থায়ী মিলনকেন্দ্র। সেই সময় স্থানীয় বিএনপির নেতারা, যেমন আনোয়ার হোসেন বাচ্চু, হান্নান, ফারুক, ইউসুফসহ অনেকেই জিসানের মায়ের হাতে রান্না করা ভাত খেয়েছেন—এমন স্মৃতি এখনো বহুজনের মুখে মুখে।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার। শুরু হয় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন। জিসানও সেই সময় প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। অভিযোগ রয়েছে, সেই সময় স্থানীয় একদল আওয়ামী সমর্থক ও তাহের বাহিনী মিলে জিসানের বাড়িতে আগুন দেয়, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়।
পরে চন্দ্রগঞ্জ বাজারে প্রকাশ্যে মারধরের পর তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। প্রায় ছয় মাস জেল খাটেন তিনি। এরপর আরও একাধিকবার গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হন বলে দাবি বিএনপি নেতাকর্মীদের।
১৯৯৯ সালে ঢাকা বিএনপি অফিসের সামনে থেকে ফের গ্রেফতার হন জিসান ও তার সঙ্গীরা। এরপর শুরু হয় চার বছরের কারাবরণ। ২০০২ সালে মুক্তি পাওয়ার পর তাকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেই সংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন সহস্রাধিক নেতাকর্মী। পরে তার বিবাহোৎসবেও যোগ দেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা।
পরিবারের যারা একসময় রাজনীতিকে ঘৃণা করতেন, তারাই পরবর্তীতে জিসানের জনপ্রিয়তা দেখে গর্ববোধ করতে শুরু করেন। জিসানের রাজনৈতিক পথচলা ছিল কণ্টকাকীর্ণ, কিন্তু ত্যাগ-তিতিক্ষা দিয়ে তৈরি সেই পথ তাকে দিয়েছে পরিচিতি ও নেতৃত্বের স্থায়ী আসন।
তবে তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অপরাধ, অনিয়ম বা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে, দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়ে এবং ত্যাগের রাজনীতি করে তিনি অর্জন করেছেন নেতাকর্মীদের আস্থা।