মো:সাদেকুল ইসলাম,লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি: জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে একমাত্র স্বাস্থ্য সেবার প্রতিষ্ঠান কমিউনিটি ক্লিনিক। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যকর্মীকে ৬০০০ লোকের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে হয় প্রতিনিয়ত। এরই ধারাবাহিকতায় লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলায় ৩৪ টি কমিউনিটি ক্লিনিক ৩৪ জন সিএইচসিপি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন নিরলস ভাবে।২০২৪ সালের জুন মাসের পর থেকে তাদের বেতন ভাতা বন্ধ। পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা অতি কষ্টে জীবনযাপন করছেন। সারপুকুর কমিউনিটি ক্লিনিক এর স্বাস্থ্যকর্মী সিএইচসিপি নুরুজ্জামান স্বপন বলেন। আমাদের চার মাস ধরে বেতন বন্ধ। এই আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের চাকুরী জাতীয়করণ করার নামেও তামাশা করেছে। চলতি বছরে আমরা প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের আশ্বাসে আমরা তা প্রত্যাহার করি এবং কর্মস্থলে ফিরে আসি।
২০০০ সাল পর্যন্ত ১০ হাজারের অধিক ক্লিনিক স্থাপন করা হয় সারা দেশের বিভিন্ন ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে।
২০০০-পরবর্তী রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয় কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প।
এই জনকল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠানটি ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রায় বন্ধ ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছায়। ২০০৯ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পুনরায় সরকার গঠন করে জনগণের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতি আবারও বিশেষ নজর দেন।
RCHCIB প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে নতুন ক্লিনিক নির্মাণ ও কর্মী নিয়োগ দিয়ে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার নতুন যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের অক্টোবর মাস হতে। কমিউনিটি ক্লিনিক কর্মীদের পদবির নামকরণ হয় ‘কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার’ বা সংক্ষেপে ‘সিএইচসিপি’।
দেশের একঝাঁক তরুণ-তরুণী স্বচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে (৫২ ভাগ নারী, ৪৮ ভাগ পুরুষ) কমিউনিটি ক্লিনিকে তাদের কর্মজীবন শুরু করেন। প্রকল্পের অধীনে চাকরি হলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও প্রত্যাশা থেকে স্ব স্ব এলাকায় নিয়োগকৃত কর্মীরা তাদের সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে এ সেবা প্রদান চালিয়ে যেতে শুরু করেন নতুন উদ্যমে। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বপ্রথম কমিউনিটি ক্লিনিক কর্মীদের চাকরি রাজস্বকরণের উদ্যোগ নেন তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ও প্রকল্প পরিচালক (আরসিএইচসিআইবি)।
পরবর্তীকালে দেশের সব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে চিঠি প্রেরণের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবাদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ সিএইচসিপিদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে নির্দেশনা দেয়া হয়।
এরপর কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) চাকরি স্থায়ীকরণ প্রসঙ্গে পরিচালক, প্রশাসন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে দেশের সব সিভিল সার্জনদের অবহিত করে আরও একটি চিঠি ইস্যু করা হয়।
ইতিমধ্যে চলমান প্রকল্প শেষ হয়ে নতুন প্রকল্প শুরু হল। সেই প্রকল্পও শেষ হয়ে তৃতীয় সিবিএইচসি প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হল কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিক কর্মীদের চাকরি রাজস্বকরণের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কর্মীদের বেতন-ভাতা কনস্যুলেটেড হিসেবে প্রদান করা হয়।
সরকারি কোনো সুবিধাও তারা এখন পর্যন্ত পাননি। ফলে বাধ্য হয়ে শুরু হল কমিউনিটি ক্লিনিক কর্মীদের স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন, মহাসমাবেশ কর্মসূচিসহ সর্বশেষ ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দীর্ঘ এক মাস টানা অবস্থান কর্মসূচি।