মোঃ মাসুদ রানা,ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি: “জন্ম থেকে মৃত্যু” এই চলার পথটির নামই জীবন। কিন্তু সবারই জীবন অর্থবহ হয় না।
এক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যক্তিকে করতে হয় কঠোর পরিশ্রম, হতে হয় ধৈর্যশীল। অন্যের প্রতি সহনশীলতা ও
সদালাপী আচরনে হয়ে ওঠে অন্যতম ব্যক্তি বিশেষ। এমনই এক ব্যক্তি লেখক সিরাজুল হক মন্টু। বগুড়ার
কাহালু উপজেলার শেখাহার মন্ডলপাড়ার মরহুম আলতাফ হোসেন মন্ডল ও জাহানারা বেগমের ছেলে
তিনি। শুধু অত্র এলাকায় নয়, পার্শ্ববর্তী দুপচাঁচিয়া ও আদমদীঘি উপজেলায় একদিকে চাকুরি
করার সুবাদে অপরদিকে সাহিত্য প্রেমী হিসেবে মন্টুভাই হিসেবে বেশ পরিচিতি রয়েছে।
সদালাপী, মাধুর্যপূর্ণ ব্যবহারে সহজেই মানুষকে আপন করে নেওয়ার মানসিকতার জন্য তার বেশ
সমাদর রয়েছে। শিক্ষা জীবনে শেখাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে তিনিই প্রথম পঞ্চম
শ্রেনিতে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি এইচ,এস,সি পাস করে
সরকারি আজিজুল হক কলেজে বাংলা অনার্সে লেখাপড়া করার সময় ইউ,এনও অফিসে অফিস
সহকারী পদে চাকুরি পান। পরবর্তীতে ইউএনও অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে
আদমদীঘি উপজেলা হতে পদোন্নতি পেয়ে চাকুরি জীবন শেষ হয় তাঁর। ছাত্রাবস্থা থেকেই
সিরাজুল হক মন্টু সাহিত্যের প্রতি বেশ অনুরাগী ছিলেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তিনি বহু
লেখকের বই পড়েছেন। বই পড়ার পাশাপাশি তিনি তিনটি উপন্যাস লিখেছেন।উপন্যাস গুলো হলো
“শেষ ঠিকানা”, “খোলা আকাশের নিচে” ও “তোমার অপেক্ষায় থাকবো”। উপন্যাস লেখার
পাশাপাশি তিনি গানও রচনা করেছেন। সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী সিরাজুল হক মন্টু চাকুরি
ও সাংসারিক জীবনের পাশাপাশি একজন দক্ষ সংগঠক বটে। এলাকার শিক্ষার্থী ও সাহিত্য
প্রেমীরা যাতে বিভিন্ন লেখকের বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারে তার জন্য তিনি নিজে ব্যক্তিগত
ভাবে নিজ বাড়িতে তার মা-বাবার নামানুসারে ‘জাহানারা আলতাফ গ্রন্থাগার’ প্রতিষ্ঠা
করেছেন। সেই সঙ্গে বেশ কয়েকটি সংগঠনের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। মধুমতি
সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক তিনি। এছাড়া শেখাহার গণকেন্দ্র পাঠাগার, ডাঃ
মুসা পাঠাগার, মাটির মায়া স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও দুপচাঁচিয়া লেখক সংঘের প্রতিষ্ঠাতা
সভাপতি, শেখাহার উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় ৬ বার সভাপতি
নির্বাচিত হন। দুপচাঁচিয়া বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য
নির্বাচিত হন। তাঁর প্রচেষ্টায় ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় শেখাহার হাটের মসজিদের
দ্বিতীয়তলা ও শেখাহার উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা ভবন নির্মিত হয়। তার প্রতিষ্ঠিত গ্রন্থাগারে
জ্ঞানমূলক, নানা মসীষীর জীবনি, উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধসহ ধর্মীয় বই রয়েছে। বর্তমান
সামাজিক প্রেক্ষাপটে যেখানে বেশিরভাগ মানুষই অর্থের পিছনে ছোটেন, কিন্তু সিরাজুল
হক মন্টু তার ব্যতিক্রম।তিনি অর্থ কে প্রধান্য না দিয়ে জ্ঞান চর্চা বা সাধনাকে প্রাধান্য
দিয়ে আসছেন। আদমদীঘি উপজেলার সাবেক এ প্রশাসনিক কর্মকর্তা সিরাজুল হক মন্টু
একজন সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ সংগঠক, পরপোকারী জ্ঞান সাধক ব্যক্তি। চাকুরি জীবনে তিনি
ব্যক্তিগতভাবে অনেক অসহায় ও দুঃখী মানুষের উপকার করেছেন এবং আজও সাধ্যমতো তা করে
আসছেন। কোন অসহায় ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে খালি হাতে ফেরত যাননি। এসব গ্রন্থাগারে
জ্ঞানমূলক, নানা মনীষীর জীবনী, উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধসহ ধর্মীয় বই রয়েছে।
তার পঠিত উল্লেখযোগ্য বই এর মধ্যে রয়েছে অমীয় ভূষণের “গঢ় শ্রীখন্ড”, বিমল মিত্রের
“বেগম মেরী বিশ্বাস”, সুনীল গঙ্গোঁপ্যাধায়ের “পূর্ব পশ্চিম”, “প্রথম আলো”, হুমায়ূন
আহমেদ এর “বাদশা নামদার”, “জোছনা ও জননীর গল্প”, জসীম উদ্দিনের “সুজন বাদিয়ার
ঘাট”, “নকশী কাথাঁর মাঠ”, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “গীতাঞ্জলি”, “চোখের বালি”, “নৌকা
ডুবী”, “শেষের কবিতা”, শরৎচন্দ্রের “গৃহদাহ”, “দেবদাস”, কাজী নজরুল ইসলাম এঁর “ব্যথার
দান” সহ অনেক বই মনীষী, কবি ও সাহিত্যিকদের জীবনী।
একান্ত আলাপচারিতায় সিরাজুল হক মন্টু বলেন, ছোট বেলা থেকেই বই পড়ার প্রতি
নেশা ছিল আমার। সেই থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন লেখকের বহু বইসহ ধর্মীয় বই পড়েছি।
আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহে প্রায় ৩হাজার বই রয়েছে। এলাকার সাহিত্য প্রেমীরা যাতে মেধা ও
মননে আরও বিকশিত হতে পারে সেই লক্ষ্যে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী
প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। সমৃদ্ধ পাঠাগার সবধরণের জ্ঞানতৃষ্ণা নিবরাণ করে। মানুষের
নৈতিক চরিত্র গঠনে অবদান রাখে। বই ছাড়া প্রকৃত মনুষ্যত্ব লাভ করা যায় না।তাই পাঠাগারের
মাধ্যমে একটি জাতি উন্নত, শিক্ষিত ও সাংস্কৃতিবান জাতি হিসেবে গড়ে উঠে। সেই
সঙ্গে তিনি আরও বলেন, যতদিন বেঁচে থাকবো অসহায়, নিপীড়িত মানুষের পাশে থেকে শোষণ
মুক্ত বৈষম্যহীন সমাজগড়ার কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখবো।
শিরোনামঃ
নোটিশঃ
সাহিত্য প্রেমী ও দক্ষ সংগঠক সিরাজুল হক মন্টুর গল্প
- Reporter Name
- Update Time : ১০:০৭:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
- ৩১ Time View
Tag :
Popular Post