
খাইরুল ইসলাম–ডেস্ক রিপোর্ট◼️
রাজধানীর গেন্ডারিয়া, পুরান ঢাকার অলি-গলিতে লুকিয়ে আছে অনেক গল্প। কিন্তু তাদের মধ্যেও কেয়া ইসলামের গল্পটা একটু ভিন্ন—একটা সংগ্রামের, একটা স্বপ্নের, আর সেটা বাস্তবে রূপ দেওয়ার গল্প।
কেয়া ইসলাম শুধু একজন নারী নন, তিনি এক জন প্রেরণা। একজন সফল নারী উদ্যোক্তা, একজন দক্ষ বিউটি এক্সপার্ট, এবং সর্বোপরি একজন মানবিক মানুষ। তার প্রতিষ্ঠিত ব্লাশ বিউটি পার্লার ২০২২ সাল থেকে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত নারী, তৃতীয় লিঙ্গ এবং গরিব অসহায় মানুষদের জন্য প্রশিক্ষণের দরজা খুলে দিয়েছে। শুধু ব্যবসা নয়, তার উদ্যোগ একটি সামাজিক আন্দোলন—স্বাবলম্বিতার আন্দোলন।
সময়টা ১৯৯৮ সাল। মাত্র অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী কেয়া ইসলাম তখন। বাবার মৃত্যুতে পৃথিবীটা যেন এলোমেলো হয়ে যায়। আর্থিক অনিশ্চয়তা, সামাজিক বাধা—সবকিছুর মাঝেও তার মনজুড়ে ছিল একটাই স্বপ্ন—একদিন সে নিজের পায়ে দাঁড়াবে, অন্যদেরও দাঁড় করাবে।
সেই বিশ্বাস থেকেই মাত্র দুই টাকা দিয়ে ভ্রু প্লাগের কাজ শুরু করেন নিজের বাসায়। তখন কোনো পার্লার ছিল না, ছিল শুধু মন আর হাতের কাজে বিশ্বাস। শুরু থেকেই তিনি অন্যদের ফ্রিতে কাজ শেখাতে থাকেন।
বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন অসংখ্য মানুষ, গত মাসেই ২০ জন নারী-তৃতীয় লিঙ্গসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তার শেখানো শিষ্যরা এখন দেশের নানা প্রান্তে কাজ করছেন, কেউ কেউ খুলেছেন নিজস্ব প্রতিষ্ঠান।
তিনি জানান, “আমি শুধু কাজ শেখাই না, প্রয়োজনে আর্থিক সহায়তাও করি। কারণ আমি জানি, দরজায় কড়া নাড়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়।”
কেয়া ইসলামের ভাষায়, “উদ্যোক্তা হতে হলে মনকে ফ্রেশ রাখতে হবে। ভালো ব্যবহার, ভালো চরিত্র, পরিষ্কার পরিকল্পনা থাকলে তবেই সফলতা আসে। লোভ, লালসা, প্রতারণা—এগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।”
সবার আগে মানুষ—এই বিশ্বাস থেকেই কেয়া ইসলাম তার প্রতিষ্ঠান খুলেছেন সকল শ্রেণির মানুষের জন্য। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের তিনি স্বাগত জানিয়েছেন সম্মানের সাথে। তার মতে, “ওদেরও তো জীবন আছে, স্বপ্ন আছে। একটু হাত ধরলেই বদলে যেতে পারে ভাগ্য।”
তিনি জানান, তার লক্ষ্য আরও বড়। ভবিষ্যতে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ একাডেমি গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে যেখানে অগণিত অসহায় নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ কাজ শিখে আত্মনির্ভর হতে পারবেন।
কেয়া ইসলামের একটি প্রেরণামূলক বাণী:
আমি চাই প্রতিটি নারী নিজের পায়ে দাঁড়াক। আমিও তো পারি—তাহলে তুমিও পারবে, যদি ইচ্ছা থাকে!