
খাইরুল ইসলাম–ডেস্ক রিপোর্ট◼️
বাংলাদেশের ঈমানদার ছাত্রসমাজের ইতিহাসে ৩০ জুন একটি গৌরবোজ্জ্বল ও বেদনাবিধুর দিন। ১৯৯৪ সালের এই দিনে ইসলামবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে ঈমানি প্রতিবাদ করতে গিয়ে শাহাদাত বরণ করেন এক মাত্র ১৪ বছরের কিশোর—শহীদ আরমান (রহ)।
শহীদ আরমান কিশোরগঞ্জ শহরের আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। পিতা আনোয়ার হোসেন ছিলেন কিশোরগঞ্জ টেলিগ্রাফ অফিসের একজন কর্মচারী। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে আরমান ছিলেন সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের প্রতি যত্নশীল, মেধাবী, শান্ত স্বভাবের এবং আদর্শবান মুসলিম কিশোর হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
১৯৯৪ সালের ৩০ জুন ইসলাম অবমাননাকারী তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেওয়া হয়। ২৯ জুন, আছরের নামাজ পড়ে শহীদী মসজিদের খতিব মাওলানা আনোয়ার শাহের কাছে আরমান জানতে চান, “কালকের হরতালে গেলে শহীদ হওয়া যাবে কি না?”
পরদিন ফজরের নামাজ পড়ে পরিবারের সদস্যদের জাগিয়ে তোলেন আরমান। সকাল ৬টায় নাস্তা করে মায়ের অনুমতি নিয়ে হরতালের মিছিলে অংশ নিতে রওনা হন।
কিশোরগঞ্জ শহরের গৌরাঙ্গবাজার এলাকায় ইমাম ও উলামা পরিষদের নেতৃত্বে মিছিল চলাকালে, বিনা উসকানিতে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই শাহাদাত বরণ করেন এই সাহসী কিশোর।
শহীদ আরমানের আত্মত্যাগ সাধারণ কোনো মৃত্যু নয়, বরং তা ঈমানি চেতনার এক জ্বলন্ত প্রতীক। একজন কিশোর হয়েও তিনি বুঝেছিলেন ধর্মীয় অপমান সহ্য করা যায় না। তাঁর আত্মত্যাগ প্রমাণ করে—আদর্শের পথে চলতে বয়স নয়, প্রয়োজন সাহস, ঈমান ও আত্মোৎসর্গের মানসিকতা।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস শহীদ আরমানকে ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করে। ৩০ জুন দিনটিকে তারা শহীদ আরমান দিবস হিসেবে পালন করে থাকে।
এই দিনে ছাত্রসমাজের প্রতি আহ্বান জানানো হয়—
১. ইসলাম বিদ্বেষ ও ধর্মদ্রোহিতার বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে ঈমানি অবস্থান নিতে
২. শহীদ আরমানের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আদর্শিক ও আত্মনির্ভরশীল জীবন গড়তে
৩. ইনসাফপূর্ণ ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিজেকে প্রস্তুত করতে
শহীদ আরমান ছিলেন এক আদর্শিক আলো, যার আত্মত্যাগ আজও আমাদের চোখে জল আনে, বুক ভরে দেয় সাহস ও ঈমানের শক্তিতে।
আমরা শহীদ আরমানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন এবং তাঁর রক্তের বিনিময়ে একটি ইনসাফপূর্ণ সমাজ কায়েম করে দেন—এই দোয়া করি সকলের পক্ষ থেকে।